ডেস্ক রিপোর্ট:
যশোর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থাপিত ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এক সময় সারা দেশের জন্য একটি আদর্শ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে এই প্লান্ট এখন কার্যত অচল অবস্থায়।
অভিযোগ উঠেছে, প্লান্ট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ময়লা প্রক্রিয়াকরণে যথাযথ ভূমিকা রাখছে না। এতে পরিবেশ দূষণ ও দুর্গন্ধে ভুগছে স্থানীয় বাসিন্দারা। পৌরসভা জানিয়েছে, এসব অনিয়মের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়েছে।
২০১৮ সালে স্থাপিত এই প্লান্টে গৃহস্থালির বর্জ্য থেকে জৈব সার ও বায়োগ্যাস উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল। বায়োগ্যাসের মাধ্যমে প্লান্টের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু ‘দ্য স্কেট লিমিটেড’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ২০ বছরের জন্য লিজ দেওয়ার পর থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল মিলছে না।
চুক্তি অনুযায়ী পৌরসভার বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি শুরু থেকেই সেই নিয়ম মানছে না। বরং তারা সার তৈরিতে পৌরসভার বর্জ্যের পরিবর্তে গোবর ও মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করছে। এতে প্লান্টে ময়লার স্তূপ জমে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে এবং স্থানীয়দের ভোগান্তি তীব্র হচ্ছে।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, “ময়লা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে নিয়ম স্পষ্ট। পচনশীল বর্জ্য থেকে সার তৈরি করতে হবে এবং অপচনশীল বর্জ্য শেলে ফেলতে হবে। কিন্তু দ্য স্কেট লিমিটেড এই নিয়ম মানছে না। আমরা তাদেরকে সতর্ক করেছি এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছি।”
পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারী অপু জানান, “যশোরের ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এক সময় দেশের অন্যান্য পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের জন্য মডেল হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি লিজ এবং তদারকির অভাবে এখন এটি কার্যকারিতা হারাচ্ছে।”
পৌরসভার এক সাবেক কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্লান্টটি ২০ বছরের জন্য লিজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্ন ছিল। তৎকালীন মেয়রের ব্যক্তিগত স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।”
অন্যদিকে দ্য স্কেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক সোহেল রেজা দাবি করেন, “প্রতিদিন প্রায় ৭০ টন বর্জ্য প্লান্টে আসে, যা শতভাগ আলাদা করা সম্ভব নয়। এছাড়া আমরা এসিআই-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ, তাদের চাহিদা অনুযায়ী সার উৎপাদন করতে হয়।”
পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, “প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম আমরা নজরে এনেছি। তাদের চুক্তির শর্ত মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে চুক্তি বাতিলের বিষয়েও ভাবা হবে।”
বর্তমানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতায় যশোর পৌরবাসী মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্লান্টের কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনতে সঠিক তদারকি ও কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরি।