ইরানে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলা: বিস্তৃতি ও কৌশলে নজিরবিহীন তীব্রতা
সম্প্রতি ইরানে চালানো ইসরায়েলের সামরিক অভিযান আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিকতর তীব্র ও কৌশলগতভাবে বিস্তৃত। এবার শুধু সামরিক ঘাঁটিই নয়, বরং ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। এর পেছনে রয়েছে শত্রুপক্ষের প্রতিশোধ নেওয়ার সক্ষমতা নষ্ট করার কৌশল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল লেবাননে হিজবুল্লাহর ওপর পূর্বের ‘ডিক্যাপিটেশন স্ট্র্যাটেজি’—অর্থাৎ নেতৃত্ব নিধনের কৌশল—এবার ইরানে প্রয়োগ করেছে। এর মাধ্যমে তেহরানের মধ্যে নেতৃত্ব সংকট তৈরি করাই উদ্দেশ্য। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ইরানে চালানো হামলার ধরন হিজবুল্লাহর ওপর বৈরুতে চালানো অভিযানের সঙ্গে অনেকাংশে মিলে যায়।
যদিও এখনো পর্যন্ত ইরানের সর্বোচ্চ নেতৃবর্গের কেউ নিহত হয়েছেন এমন কোনো তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে বলেও কোনো প্রমাণ মেলেনি।
তবে অভিযানের শুরুতেই ইরানি সেনাবাহিনী প্রধান, বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু বিজ্ঞানী প্রাণ হারিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, এই অভিযান কয়েক দিন ধরে চলতে পারে এবং এটি ইরানের শীর্ষ মহলে বড় ধাক্কা হয়ে থাকবে।
এ ঘটনার পর ইরানের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসা স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে তেহরান থেকে পাল্টা হামলার খবরও এসেছে। তবে সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের জবাব দেওয়ার সক্ষমতায় বড় ধরনের ছন্দপতন ঘটতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
নেতানিয়াহু এ হামলার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলেছেন, এটি ইসরায়েলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য জরুরি ছিল। তাঁর মতে, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে তা ইসরায়েলের জন্য একটি বড় হুমকি। এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ইরান অল্প সময়ের মধ্যেই একাধিক পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে সক্ষম।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন, তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে চলমান আলোচনার ঠিক আগমুহূর্তে এই হামলা চালিয়ে নেতানিয়াহু সম্ভবত সেই আলোচনা বানচাল করতেই চেয়েছেন। তাঁর কৌশলগত বিবেচনায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল।
ইসরায়েল মনে করছে, ইরান ও তার আঞ্চলিক মিত্ররা বর্তমানে এতটাই চাপে রয়েছে যে তাদের প্রতিরোধ শক্তি আগের মতো নেই। ফলে, এখনই চূড়ান্ত চাপ প্রয়োগের সময়।
তবে এই অভিযানের ফল কী হবে—ইসরায়েলের কৌশল সঠিক ছিল নাকি এটি মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত, তা খুব শিগগিরই সময়ই বলে দেবে।