1. live@www.jashorejournal.com : jashorejournal.com : jashorejournal.com
  2. info@www.jashorejournal.com : jashorejournal.com :
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিজয়: যশোর জেলার শত্রুমুক্ত হওয়ার দিন আজ

আসিফ সেতু
  • প্রকাশিত: শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ২৯ বার পড়া হয়েছে

ডেস্ক রিপোর্ট:

আজ ৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালে এই দিনে যশোর জেলা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যশোরই ছিল দেশের প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা। সেদিন বিকেলে পাক সেনারা যশোর সেনানিবাস ছেড়ে আত্মগোপনে পালিয়ে যায়। এরপরই বিজয়ী বাংলাদেশের সূর্যখচিত সবুজ-লাল পতাকা প্রথম উড়েছিল এই জেলায়—লাল বৃত্তের ভেতরে মানচিত্রখচিত বিশেষ সেই পতাকাটি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর যশোর অঞ্চলে (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল) বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (বিএলএফ) উপ-অধিনায়ক ছিলেন রবিউল আলম। তিনি জানান, ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত যশোর অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী ও হানাদার বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলে। একই সময়ে মিত্রবাহিনী সীমান্ত ঘেঁষে যশোর সেনানিবাসসহ পাক বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ করে। চাপে পড়া পাক বাহিনী ৫ ডিসেম্বর থেকেই পলায়ন শুরু করে। ছিন্ন হয়ে যাওয়া সেনারা খুলনার গিলাতলার দিকে পশ্চাদপসরণে বাধ্য হয়। পথে রাজারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যায়।

৬ ডিসেম্বর বিকেলের আগেই যশোর ক্যান্টনমেন্ট পুরোপুরি খালি করে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। বিকেলে মিত্রবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল বারাতের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তি বাহিনী সেনানিবাসে প্রবেশ করে নিয়ন্ত্রণ নেয়। খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহরে নেমে আসে বিজয়ের উচ্ছ্বাস। পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ মিছিল, প্রতিধ্বনিত হয় ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি।

এর বহু আগেই, ৩ মার্চ যশোর কালেক্টরেটের সামনে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীনতার শপথ নেয় যশোরবাসী। সেদিনই রাজপথে জঙ্গি মিছিলে হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন চারুবালা কর—যশোরের প্রথম নারী শহীদ। এরপর প্রতিরোধ আরও সংগঠিত হয়; সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্র-যুবক-নারীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়।

২৫ মার্চের পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ২৬ মার্চ রাতে যশোরের তৎকালীন সংসদ সদস্য জননেতা মশিয়ুর রহমানকে সেনানিবাসে নিয়ে নৃশংস নির্যাতন করা হয়, যার জেরে তিনি ২৩ এপ্রিল শহীদ হন। ২৫ থেকে ২৯ মার্চ পুরো যশোরে কারফিউ চলে, আর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ। ২৮ মার্চ বেজপাড়ায় সুধীর ঘোষ, সত্যব্রত ঘোষ ও নারায়ণ দাসকে ধরে নিয়ে যায় পাক সেনারা—তারা আর ফিরে আসেননি।

৩০ মার্চ বাঙালি সেনাদের নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন হাফিজ যশোর সেনানিবাসে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এরপর ৪ এপ্রিল যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার, রেলস্টেশন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। ওই একদিনেই কয়েকশ মানুষ শহীদ হন এবং পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হানাদার বাহিনীর হাতে।

যুদ্ধের পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে জুলাই থেকে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা যশোর শহরসহ আশপাশে পাক বাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করে ধারাবাহিক আক্রমণ শুরু করেন। যশোর ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর রণাঙ্গন, যার কমান্ডে ছিলেন মেজর মঞ্জুর। অপরদিকে হানাদার বাহিনীর ছিল ১০৭ নম্বর ব্রিগেড, ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের নেতৃত্বে।

২০ নভেম্বর থেকে মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর যৌথ অভিযান শুরু হয় যশোর সেনানিবাস ঘিরে। ২২ নভেম্বর রাতে পতন ঘটে চৌগাছার। সলুয়া বাজারে পাক বাহিনী নতুন ঘাঁটি নেওয়ার চেষ্টা করলেও ঘেরে ফেলে যৌথ বাহিনী। পরিস্থিতি আঁচ করে ব্রিগেডিয়ার হায়াত খান নিজের অবস্থান খুলনায় সরিয়ে নেন। শেষ প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর।

৬ ডিসেম্বর বিকেলে যখন মিত্রবাহিনীর ট্যাংক বহর বিজয়ের উল্লাসে যশোর শহরে প্রবেশ করে, তখন অগ্রভাগে ছিলেন নারাঙ্গালীর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার। গেরিলা যোদ্ধারাও সেদিন অস্ত্র হাতে শহরে ঢুকে বিজয় মিছিল করেন। আলী মঞ্জিলের সামনে দিয়ে সেই কুচকাওয়াজ আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে—বীর যোদ্ধা রবিউল আলম, আব্দুস সাত্তার, শাহাদত হোসেন, আব্দুল মান্নান ও খুরশীদ আনোয়ার বাবলুদের মতো জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্যে আজকের দিনটি এখনও গর্বে ভরিয়ে তোলে।

অবশেষে মুক্ত হয় যশোর জেলা। যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে উড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসন আজ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার যশোর জার্নাল এ সংরক্ষিত, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার অপরাধ।

ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট