
মিরাজ হোসেন তপু:
যশোরের ১২ নম্বর ফতেপুর ইউনিয়নে ভুয়া হোল্ডিং প্লেট বিতরণ ও টাকা আদায়ের অভিযোগে এলাকায় উত্তেজনা বাড়ছে। বিশ্বাসপাড়া ও আশপাশের অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবারের কাছ থেকে দুইশ থেকে আটশ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। নিজেদের ইউনিয়ন পরিষদের অনুমোদিত কর্মী পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব প্লেট বিতরণ করেন।
অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন নওশাদ নামে এক ব্যক্তি। স্থানীয়রা জানান, নওশাদ একটি ভুয়া সরকারি আইডি ব্যবহার করে নিজেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। ওই আইডিতে সরকার, মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের নাম ব্যবহার করে তাকে “ম্যানেজিং ডিরেক্টর” উল্লেখ করা হয়— যা সরকারি কাঠামোয় নেই। আইডিকর্ডে নাম ছিল NOWSHAD SORDER, জন্মতারিখ ২৫/১২/১৯৯৭। ই-মেইল, ফোন নম্বর, রক্তের গ্রুপসহ বিভিন্ন তথ্য যোগ করা ছিল। স্বাক্ষরের স্থানে লেখা ছিল “Chairman / Managing Director”— ইউনিয়ন প্রশাসক তুহিনের ভাষায় এটি “স্পষ্ট প্রতারণা”।
স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, নওশাদ দীর্ঘদিন ধরে তরুণ-তরুণীদের মোটা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়েও প্রতারণা করতেন। একই অভিযোগ আগেও ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হলে ইউনিয়ন প্রশাসক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন।
তবুও গত মাসের ২২ তারিখে ঝুমঝুমপুর ক্লাব মোড় ও বিশ্বাসপাড়া এলাকায় আবারও হোল্ডিং প্লেটের নামে টাকা নেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওইদিন নওশাদ দুই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় প্রবেশ করেন এবং একের পর এক বাড়িতে ভুয়া হোল্ডিং নম্বর দিয়ে টাকা সংগ্রহ করছিলেন। স্থানীয়রা বিষয়টি বুঝতে পেরে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে নওশাদ পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে মনে করে দ্রুত সরে পড়েন। পরে সহযোগীরা তাকে বারবার ফোন করলেও তিনি আর ফিরে আসেননি; বরং তাদের দ্রুত এলাকা ছেড়ে যেতে বলেন।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন সচিব জাকির হোসেন বলেন, “বিষয়টি প্রশাসক ভালো জানেন, তার সাথে কথা বলুন।” তিনি ক্যামেরার সামনে মন্তব্য করতে রাজি হননি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে, তবে গণমাধ্যমে সরাসরি বক্তব্য দিতে তিনি অনীহা প্রকাশ করেন।
ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। তাদের প্রশ্ন— “বারবার একইভাবে প্রতারণা চললেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?” স্থানীয়দের দাবি, কারা বা কোন প্রভাবশালীর সহায়তায় এসব চলছে, তা তদন্ত করে দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।